জার্মানিতে পড়াশোনার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে আবেদন করার জন্য যেসব সার্টিফিকেট এবং ডকুমেন্টস সংগ্রহ করতে হবে তা নিচে ধাপে ধাপে দেওয়া হলো:
১. একাডেমিক সার্টিফিকেট এবং মার্কশীট
- এসএসসি এবং এইচএসসি (বা সমমানের): আপনার এসএসসি এবং এইচএসসি সার্টিফিকেট ও মার্কশীট প্রয়োজন হবে।
- ব্যাচেলর ডিগ্রি (যদি মাস্টার্সের জন্য আবেদন করেন): মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করলে, আপনার ব্যাচেলর ডিগ্রির সার্টিফিকেট এবং একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট লাগবে।
Table of Contents
২. ভাষাগত দক্ষতার সার্টিফিকেট
আপনার প্রোগ্রাম ইংরেজি বা জার্মান ভাষায় হবে কিনা তার উপর ভিত্তি করে ভাষাগত দক্ষতা সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।
- ইংরেজি ভাষার দক্ষতা (ইংরেজি মাধ্যম প্রোগ্রামের জন্য):
- IELTS: সাধারণত ৬.০–৭.০ ব্যান্ড স্কোর প্রয়োজন।
- TOEFL: সাধারণত ৮০–১০০+ স্কোর (ইন্টারনেট-ভিত্তিক) প্রয়োজন।
- MOI এখানে দেখুন
- জার্মান ভাষার দক্ষতা (জার্মান ভাষায় প্রোগ্রামের জন্য):
- TestDaF বা DSH: জার্মান মাধ্যম প্রোগ্রামের জন্য এই পরীক্ষাগুলির একটি পাশ করতে হবে। সাধারণত B2 বা C1 স্তরের দক্ষতা প্রয়োজন।
- ভাষার সার্টিফিকেট গুলি প্রস্তুত রাখুন এবং নিশ্চিত করুন যে সেগুলি এখনও বৈধ (সাধারণত ২ বছর পর্যন্ত বৈধ থাকে)।
৩. APS সার্টিফিকেট (বাচেলর প্রোগ্রামের জন্য ২০২৩ থেকে প্রযোজ্য)
২০২৩ থেকে জার্মানিতে বাচেলর প্রোগ্রামে আবেদনকারী বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য APS সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটি আপনার একাডেমিক ডকুমেন্ট যাচাই করে দেয়।
- আপনাকে জার্মান এম্বাসি ঢাকা এর মাধ্যমে APS প্রক্রিয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। যাচাই সম্পন্ন হলে APS সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে।
- এই প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লাগতে পারে, তাই আগে থেকেই শুরু করা উচিত।
৪. Blocked Account এর প্রমাণপত্র
জার্মানিতে পড়াশোনা করার জন্য আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে, আপনি নিজের খরচ চালাতে পারবেন। সাধারণত এটি প্রমাণ করা হয়:
- Blocked Account (Sperrkonto): সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি। আপনাকে একটি ব্লকড অ্যাকাউন্টে প্রায় €১১,২০৮ (২০২৪ অনুসারে) জমা করতে হবে, যা জার্মানিতে যাওয়ার পরে মাসিক কিস্তিতে ছাড়া হবে। এখানে দেখুন
- স্কলারশিপের চিঠি: যদি আপনি স্কলারশিপ পান (যেমন, DAAD), তাহলে সেই স্কলারশিপের চিঠি আর্থিক প্রমাণপত্র হিসেবে জমা দিওয়া যাবে।
৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন পত্র
বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রোগ্রাম অনুযায়ী আপনি নিম্নলিখিত ডকুমেন্টগুলো লাগবে:
- মোটিভেশন লেটার (Statement of Purpose): কেন আপনি জার্মানিতে এবং ওই প্রোগ্রামে পড়তে চান, তা ব্যাখ্যা করতে হবে। এখানে দেখুন
- কারিকুলাম ভিটা (CV/Resume): আপনার একাডেমিক এবং পেশাগত অভিজ্ঞতা সহ একটি হালনাগাদ সিভি। এখানে দেখুন
- সুপারিশপত্র: সাধারণত ১-৩টি সুপারিশপত্র আপনার শিক্ষকের কাছ থেকে বা পূর্ববর্তী নিয়োগকর্তার কাছ থেকে প্রয়োজন হবে অবশ্যই তারা যান Associate Professor হন। যদি তাও না পান তবে Dean এবং Department Head এর কাছ থেকে নিতে হবে।
- পোর্টফোলিও: স্থাপত্য, আর্ট বা ডিজাইনের মতো কিছু প্রোগ্রামে পোর্টফোলিও প্রয়োজন হতে পারে।
৬. পাসপোর্ট
নিশ্চিত করুন যে আপনার পাসপোর্ট কমপক্ষে ছয় মাসের জন্য বৈধ রয়েছে। আর সব জায়গার আপনার পিতা মাতার নামের সাথে মিল আছে। তা নাহলে আগেই ঠিক করে নিন।
৭. স্বাস্থ্য বীমা
জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়ার জন্য আপনার স্বাস্থ্য বীমা থাকতে হবে। দুই ধরনের স্বাস্থ্য বীমা রয়েছে:
- পাবলিক স্বাস্থ্য বীমা: জার্মানিতে পৌঁছানোর পর পাবলিক স্বাস্থ্য বীমায় রেজিস্টার করতে হবে।
- প্রাইভেট স্বাস্থ্য বীমা: কিছু শিক্ষার্থী জার্মানিতে যাওয়ার আগে অস্থায়ী প্রাইভেট বীমা নিয়ে থাকে। ভিসার জন্য প্রথমদিকে প্রাইভেট বীমা গ্রহণ করতে হতে পারে। এরজন্য আপনাকে আগেই টাকা দিতে হবে নাহ কিন্তু আপনি যাদের কাছ থেকে বিমা নিচ্ছেন তাদের কাছে email করলেই আপনাকে ডকুমেন্ট দিয়ে দিবে।
৮. ভিসা আবেদনের জন্য ডকুমেন্টস
যখন আপনি একটি জার্মান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তি হওয়ার চিঠি পাবেন, তখন আপনাকে জার্মান এম্বাসি ঢাকা থেকে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য সব ডকুমেন্টেস জমা দিতে হবে। এর জন্য নিম্নলিখিত ডকুমেন্টগুলো লাগবে:
- বিশ্ববিদ্যালয়ের Admission Letter।
- ভিসা আবেদন ফর্ম।
- আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র (যেমন ব্লকড অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট)।
- স্বাস্থ্য বীমার প্রমাণ।
- APS সার্টিফিকেট (বাচেলর প্রোগ্রামের জন্য)।
- একাডেমিক সার্টিফিকেট।
- ভাষার দক্ষতার প্রমাণপত্র (ইংরেজি/জার্মান)।
৯. Uni-Assist সার্টিফিকেশন (যদি প্রযোজ্য হয়)
অনেক জার্মান বিশ্ববিদ্যালয় Uni-Assist ব্যবহার করে আবেদন প্রক্রিয়ার জন্য। Uni-Assist আপনার ডকুমেন্টগুলির মূল্যায়ন করে এবং যাচাই করে আপনার আবেদনপত্র জার্মানির শিক্ষার মান অনুযায়ী কিনা।
- আপনাকে Uni-Assist এ রেজিস্টার করে আপনার সার্টিফিকেটের কপি জমা দিতে হবে।
- তারা আপনার ডকুমেন্টগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দেবে।
১০. অপশনাল সার্টিফিকেটসমূহ
- GRE/GMAT: কিছু প্রোগ্রাম, বিশেষ করে বিজনেস বা টেকনিক্যাল ক্ষেত্রে, GRE বা GMAT স্কোর লাগতে পারে।
- ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট: যদি আপনার পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে এই সার্টিফিকেটগুলি আবেদনকে শক্তিশালী করতে পারে।
চূড়ান্ত চেকলিস্ট:
- একাডেমিক সার্টিফিকেট (এসএসসি, এইচএসসি, ব্যাচেলর)।
- ভাষার দক্ষতার প্রমাণ (IELTS, TOEFL, TestDaF, DSH)।
- APS সার্টিফিকেট (বাচেলর প্রোগ্রামের জন্য)।
- আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ (Blocked Account, Scholarship)।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত ডকুমেন্টস (মোটিভেশন লেটার, সিভি, সুপারিশপত্র)।
- পাসপোর্ট।
- স্বাস্থ্য বীমা।
- ভিসা আবেদন।
এই ডকুমেন্টগুলো প্রস্তুত রেখে, আপনি জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার প্রক্রিয়াকে সহজ করে তুলতে পারবেন।